মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

শৈলেশ্বর ঘোষ, তাঁর কুখ্যাত মুচলেকা

আমার নাম শৈলেশ্বর ঘোষ । আমার জন্ম বগুড়ায় আর বড়ো হয়েছি বালুরঘাটে। আমি ১৯৫৩ সনে বালুরঘাট হাই ইংলিশ স্কুল থেকে স্কুল ফাইনাল পাশ করেছি, ১৯৫৫ সনে বালুরঘাট কলেজ থেকে বিএ, আর ১৯৬২ সনে কলকাতার সিটি কলেজ থেকে বাংলায় স্পেশাল অনার্স । ১৯৬৩ সনে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে একদিন কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসে দেবী রায় ওরফে হারাধন ধাড়া নামে একজন তাঁর হাংরি জেনারেশন ম্যাগাজিনের জন্য আমাকে লিখতে বলেন । তারপরেই আমি হাংরি আন্দোনের লেখকদের সঙ্গে পরিচিত হই । আমি ব্যক্তিগতভাবে খ্যাতিমান লেখক সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, রবীন্দ্র দত্ত, বাসুদেব দাশগুপ্ত, প্রদীপ চৌধুরী এবং উৎপলকুমার বসুকে চিনি । গত এপ্রিল মাসে একদিন কলেজ স্ট্রিট কফিহাউসে মলয় রায়চৌধুরীর সঙ্গে আমার দেখা হয়, এবং তিনি আমার কাছ থেকে কয়েকটা কবিতা চান । তাঁর কাছ থেকে আমি জানতে পারি যে, হাংরি বুলেটিনের একটা সংখ্যা খুব শীঘ্র প্রকাশিত হবে । মাসখানেক আগে আমি তাঁর কাছ থেকে একটা পার্সেল পেয়েছি । আমি মলয় রায়চৌধুরীকে চিনি । তিনি হাংরি আন্দোলনের স্রষ্টা । হাংরি জেনারেশন ম্যাগাজিনে আমি মোটে দু'বার কবিতা লিখেছি । মলয় আমাকে কিছু লিফলেট আর দু'তিনটি পত্রিকা পাঠিয়েছিলেন কিন্তু সেগুলি সম্পর্কে কোনো নির্দেশ তিনি আমাকে দেননি । সাধারণত এইসব কাগজপত্র আমার ঘরেই থাকত । এটুকু ছাড়া হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে আমি আর কুছু জানি না । অশ্লীল ভাষায় লেখা আমার আদর্শ নয় । ১৯৬২ থেকে আমি হুগলি জেলার ভদ্রকালীতে ভূপেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যালয়ে স্কুল টিচার । মাইনে পাই দুশো দশ টাকা । বর্তমান সংখ্যা হাংরি বুলেটিনের প্রকাশের পর, যা কিনা আমার অজান্তে ও বিনা অনুমতিতে ছাপা হয়, আমি এই সংস্হার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছি । ভবিষ্যতে আমি হাংরি আন্দোলনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখব না, এবং হাংরি পত্রিকায় লিখব না । বর্তমান বুলেটিনটি ছাপিয়েছেন প্রদীপ চৌধুরী ।
                                                                 স্বাক্ষর : শৈলেশ্বর ঘোষ
                                                                 ২ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪

( শৈলেশ্বর ঘোষ হাংরি মামলায় মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়েছিলেন, এবং আদালতের ট্রেজারি থেকে রাজসাক্ষীর প্রাপ্য টাকাও নিয়েছিলেন । নিজের স্খলনকে লুকোবার উদ্দেশে তিনি অবিরাম মলয় রায়চৌধুরী এবং সমীর রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে লিখে গেছেন । নিজের পরিবারের সদস্যদেরও মলয় রায়চৌধুরী-বিরোধী তৈরি করে গেছেন । পরবর্তীকালে 'দে'জ থেকে যে হাংরি সংকলন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে এমন বহু ভুয়ো লেখকের রচনা আছে যারা হাংরি আন্দোলনের সময়ে জন্মায়নি । )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন