রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬

সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ও উৎপলকুমার বসু সম্পর্কে বাসুদেব দাশগুপ্ত

অশোকনগর
৬.৮.৬৮
শৈলেশ্বর,
গতকাল সন্দীপনের বাড়িতে Operation ( আমার মতে ) বেশ ভালই হয়েছে । কিন্তু আজও পর্যন্ত আমার রাগ পড়েনি । রাগে কড়মড় করে উঠছে দাঁত । আমি আর আপ্পা সাড়ে নয়টার সময় গিয়ে পৌঁছাই -- গিয়েই দেখি বাড়ি নেই । ফিরে আসছে, এমন সময় উনি নামলেন এক রিক্সা থেকে । আবার ঘরে এসে বসা হলো ।আমি বললাম -- 'এদিকেই এসেছিলাম । আপনার কাছে এলাম টাকাটা নিতে । পকেটে পয়সা নেই ।'ব্যাটা কিছু আন্দাজ করে --'বেশ করেছেন, খুব ভালো করেছেন...' বলতে বলতে হাওয়া হয়ে গেল । বসেই আছি দুজনে, ঘরে আর আসে না । তারপর এক সময় এলে প্রথমেই আমার দিকে তাকিয়ে --'আমি আপনাকে একটা বই দেব ঠিক করেছিলাম--- লিস্টে নাম ছিল---কিন্তু যেহেতু "নিদ্রিত রাজীবলোচন" আপনার ভালো লাগেনি, সেজন্যে আর দেবো না' ।
আমি --- সত্য গুহকে আপনি যে কপিটা দিয়েছিলেন, আমি সেটা পড়েছি -- 'কে রবীন্দ্রনাথ' ছাড়া আর কিসসু আমার ভালো লাগেনি'।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আপ্পা -- 'আপনার বইটা স্টলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ফেললাম । কিছুই হয়নি -- আপনি ফুরিয়ে গেছেন মনে হলো।'
সঙ্গে সঙ্গে সন্দীপন ফেটে পড়ল একেবারে । What do you mean by 'ফুরিয়ে গেছেন' ? বাসু বললে আমি সহ্য করবো । কিন্তু তুমি কী লিখেছ, কটা বই পড়েছ ?'
আপ্পা --'আমি পাঠক হিসেবে বলেছি, আর কটা বই পড়েছি, সে কৈফিয়ৎ আপনাকে দেবো কেন ?'
সন্দীপন--'দেবো না মানে... ইয়ার্কি ( হাত-পা ছুঁড়ে ) একি উত্তমকুমারের 'দেয়া নেয়া'...যে ফুরিয়ে গেছেন...তুমি কি মেয়েছেলে...ন্যাকা...দাঁত কেলিয়ে বললে 'ফুরিয়ে গেছেন'...মিচকের মতো তুমি হাসছিলে...একটা stray comment করলেই হলো ?' এবং আরো অনেককিছু...ওর চিৎকারে ঘর ফেটে যাচ্ছিল প্রায় । ব্যাপার দেখে আমি গম্ভীর হয়ে ---'আপনি অযথা উত্তেজিত হচ্ছেন । ওকে simply আপনি বলতে পারেন তুমি বুঝতে পারোনি...আর তাছাড়া আমার অন্য একটা কথা ছিল...আপনি নাকি বলেছেন আমি "ক্ষুধার্ত" আপনাকে গছিয়েছি ? এবার সন্দীপন চৌকি ছেড়ে লাফিয়ে ওঠে -- কে ? কে বলেছে ? আমি আপ্পাকে বলেছি ? কবে ? কোথায় ? এসব কী হচ্ছে...আপনারা কী চান স্পষ্ট করে বলুন...কী করতে চাইছেন আপনারা ?'
আমি বাধা দিয়ে --'আপনি বহুবচন ব্যবহার করবেন না..."আপনারা" বলতে আপনি কি বোঝাতে চাইছেন ?'
তারপর এইভাবে ঘটনা নিজপথে এগিয়ে চলে । মাঝখানে মনে হয়েছিল ও কেঁদে ফেলবে । তখন আমিও একটু নরম হই, সঙ্গে আপ্পাও । আপ্পা সাড়ে দশটার সময় চলে যায়। আমি সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত । সন্দীপন ওর বাড়িতে থাকার জন্য পীড়াপীড়ি করছিল ...রাজি না হলে শেষ পর্যন্ত ২টাকা প্লাস ট্যাক্সি ভাড়া ৩টাকা দিয়ে দিয়েছে । আমি দিদির বাড়ি চলে এসেছি । অবনী ফিরেছে । লোকের ধাক্কায় গোটা দশেক খাবারসুদ্ধ 'ট্রে' ট্রেনের নীচে পড়ে গিয়েছিল । ফাইন দিতে হয়েছে ।
শনিবার দিন যাবার চেষ্টা করবো । ভালোবাসা রইলো । ইতি বাসুদেব ।
আর ভাল কথা...উৎপলকেও আমি মনের সাধ মিটিয়ে খিস্তি দিয়ে এসেছি ।

( শোনা যায় বাসুদেব দাশগুপ্ত অত্যন্ত মিথ্যাবাদী ছিলেন বিশেষত টাকার ব্যাপারে । চাকরি থেকে অবসর নেবার পর তিনি ভায়াগ্রার খোঁজ করে বেড়াতেন, সমীর রায়চৌধুরীর একটি সাক্ষাৎকার থেকে জানা গেছে । )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন