৬ই অক্টোবর ২০১৬ তারিখে তাঁর স্ট্যাটাসে অনুপম মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন, "নবারুণ ভট্টাচার্যকে সেটাও সইতে হয়নি, যেটা হাংরি লেখকদের সইতে হয়েছে। 'হারবার্ট' বা 'কাঙাল মালসাট' কি হাংরিদের ডিকশন থেকে, মানসিকতা থেকে, বা আঙ্গিক থেকে উঠে আসছে না ? নবারুণ ছিলেন মহাশ্বেতা দেবী এবং বিজন ভট্টাচার্যের সন্তান । বাংলা সাহিত্যের একেবারে ভেতরে তাঁর পারিবারিক পরিচয় । এই সুবিধেটা মলয় রায়চৌধুরীরা পাননি । নবারুণ শুরু থেকে বাস করেছেন সেই আবহাওয়ায় যেটার নাম ঋত্বিকতন্ত্র । নবারুণ জানতেন প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার মিথ কী ভাবে গড়ে ওঠে, সেটাকে নিজের জীবনে তিনি দুর্দান্তভাবে প্রয়োগ করেছেন । আজ যখন মলয় রায়চৌধুরী 'কবিতীর্থ' বা 'মধ্যবর্তী'তে উপন্যাস লেখেন, তখন কেউ বলে ফ্যালেন, সেগুলো নবারুণের দ্বারা প্রভাবিত । কিন্তু উল্টোটাই কি ঠিক নয়?"
এই পোস্টের প্রসঙ্গে মলয় রায়চৌধুরী জানিয়েছেন যে "নবারুণ ওনার পত্রিকায় আমার লেখা ছাপতে চাননি । আমার 'নামগন্ধ' উপন্যাসে একটি চরিত্রের গাড়ি সেই থিয়েটারের সামনে থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল, যেখানে বিজন ভট্টাচার্য অভিনয় করছিলেন । আমার বাবা-মা কেউ স্কুলে পড়েননি, দুজনেই আঙ্গুঠাছাপ।"
উপরের দুটি বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে নবারুণ ভট্টাচার্য এবং মলয় রায়চৌধুরী বাঙালির দুটি বিপরীত সাংস্কৃতিক মেরুর নিবাসী ।এই প্রসঙ্গে যদি অন্যান্য হাংরি আন্দোলনকারীদের সামাজিক ও আর্থিক ব্যাকগ্রাউণ্ডের কথা তোলা হয় তাহলে দেখা যাবে যে সুবিমল বসাকের বাবা ছিলেন একজন স্যাকরা, যিনি দারিদ্রের কারণে নাইট্রিক অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করেন । দেবী রায় ছিলনের হাওড়ার একটি বস্তির একটি ঘরের ভাড়াটে, তাঁর মা প্রতিদিন বাজার থেকে কুড়িয়ে-আনা কুমড়োর বীজ শুকিয়ে বিক্রি করে দেবী রায় ও তাঁর ছেটো ভাইকে প্রতিপালন করেছিলেন । ফালগুনী রায় ছিলেন ধ্বসে যাওয়া এক পোড়োবাড়ির ছেলে যার সদস্যরা সেই বাড়ির মার্বেল পাথর তুলে-তুলে বিক্রি করে সংসার চালাতেন ; স্বাভাবিক যে উপযুক্ত খাওয়া-দাওয়া না পাবার কারণে অতি অল্প বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল । বাসুদেব দাশগুপ্ত, সুভাষ ঘোষ, শৈলেশ্বর ঘোষ, প্রদীপ চৌধুরী ও সুবো আচার্য ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তান । এনাদের কারোর বাবা-মা শিক্ষার সুযোগ পাননি এবং পশ্চিমবাংলায় এসে বেঁচে থাকার লড়াই লড়তে হয়েছিল ।
শংকর সেন লিখেছেন, "নবারুণবাবু ওনার পত্রিকায় একবার হাংরিদের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন ; সুতরাং মলয়বাবুর লেখা ওনার পত্রিকায় প্রকাশিত হবার প্রশ্ন ওঠে না । নবারুণবাবু ছিলেন অভিজাত প্রতিষ্ঠানবিরোধী। বিজন ভট্টাচার্যের ছেলে, অভিজাত পরিবারের সন্তান, সোভিয়েত ও কমিউনিস্টদেশ ভ্রমণের সুযোগ-পাওয়া নবারুণ ভট্টাচার্যের সঙ্গে হাংরি জেনারেশনের লেখকদের তুলনা করা উচিত নয় । কলকাতার যে চাকচিক্যময় সমাজে নবারুণবাবুর ঘোরাফেরা ছিল প্রতিদিনের ব্যাপার, সেখানে হাংরি জেনারেশনরা ছিল সম্পূর্ণ উটকো ।"ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস", "নামগন্ধ", "অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা" উপন্যাসগুলির অভিজ্ঞতার গভীরতা কলকাতাকেন্দ্রিক নবারুণবাবুর ছিল না । তিনি ছিলেন কলকাতার লেখক, কলকাতার অন্ধকার জগতের জন্য গড়ে-নেয়া ভাষার লেখক । মলয় রায়চৌধুরীর মতো ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল না।"
এই প্রসঙ্গে উপযুক্ত মন্তব্য করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুতপা সেনগুপ্ত । তিনি বলেছেন, "আসলে নবারুণ মধ্যপন্হী । হাংরি জেনারেশনের টুলস নিয়ে জনপ্রিয় বয়ান ফেঁদেছেন।"
নবারুণ ভট্টাচার্যের মধ্যপন্হা অবলম্বন সম্পর্কে নয়নতারা দাশ বলেছেন, "নবারুণবাবু স্ট্যালিনের নরসংহার নিয়ে নিশ্চুপ । সিপিএমের খুনি দৌরাত্ম্য নিয়ে নিশ্চুপ । কেবল আনন্দবাজারকে আক্রমণ করে কি প্রতিষ্ঠানবিরোধী হওয়া যায় ? মলয় রায়চৌধুরী কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি । হয়তো উনি সেই জন্যই বড়ো প্রকাশক পাননি । প্রকৃত অর্থে হাংরি জেনারেশনরাই একমাত্র প্রতিষ্ঠানবিরোধী।"
উপরে উল্লিখিত বক্তব্যগুলি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ । কলকাতার ধনীদের কলোনি গল্ফগ্রিন নিবাসী নবারুণ ভট্টাচার্য ছিলেন অভিজাত বাঙালি সমাজের অংশ, তাঁর পিতা ছিলেন প্রখ্যাত নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা, তাঁর মা একজন প্রথিতযশা লেখিকা, তাঁর দাদু মনীশ ঘটক একজন কবি ও গল্পকার । তাঁকে স্বাভাবিকভাবে "প্রতিষ্ঠানবিরোধী" তকমা দিয়েছেন ওই অভিজাত বাঙালি সমাজের সদস্যরা । প্রতিষ্ঠানবিরোধী তকমা পেয়েও রাষ্ট্রের হাত থেকে ১৯৯৩ সালে "হারবার্ট" উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার নিতে তাঁর বিবেকে বাধেনি, যখন কিনা সেই রাষ্ট্রের তিনি অবিরাম সমালোচনা করেছেন, পুরন্দর ভট ছদ্মনামে তার বিরুদ্ধে অশ্লীল কবিতা লিখেছেন । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ২০০৩ সালে সাহিত্য অকাদেমির একটি পুরস্কার মলয় রায়চৌধুরী প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ।
"ভাষাবন্ধন" নামে নবারুণবাবুর একটি প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা ছিল, প্রতি বইমেলায় তিনি স্টল দিতেন । নাটকের ও ফিল্মের অভিজাত শ্রেনির মানুষদের সঙ্গে উঠতেন-বসতেন, আড্ডা দিতেন । সুমন মুখোপাধ্যায় "হারবার্ট" নিয়ে ফিল্ম করেছিলেন, "কাঙাল মালসাট" নিয়ে নাটক করেছিলেন । ওই সমাজের সদস্যেরা ছিল হাংরি জেনারেশনদের ধরাছোঁয়ার বাইরে । যেমন সৃজিৎ মুখোপাধ্যায় হাংরি জেনারেশনকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য "বাইশে শ্রাবণ" ফিল্মে একটি পাগল চরিত্রকে হাংরি আন্দোলনের কবি হিসাবে উপস্হিত করেছিলেন, পরিচালক গৌতম ঘোষ অভিনীত সেই চরিত্রটি নাকি কলকাতার বইমেলায় আগুন ধরিয়েছিল !
এবারে আসা যাক নবারুণবাবুর স্ট্যালিনপ্রীতি নিয়ে । তিনি কোথাও উল্লেখ করেননি স্ট্যালিনের সোভিয়েত রাষ্ট্রে কবি-লেখকদের কী গতি করা হয়েছিল, অথচ তিনি সোভিয়েতদেশে গিয়েছেন । স্ট্যালিনের কাছ থেকে কবি-লেখক নিধনের গুরুমন্ত্র পেয়ে টিক্কা খান-ইয়াহিয়া খানরা স্বাধীন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, লাতিন আমেরিকাতেও শাসকরা স্ট্যালিনের গুরুমন্ত্র পেয়ে কবি-লেখকদের হত্যা করার ঐতিহ্য তৈরি করে ফেলেছে । নবারুণবাবু এগুলোর বিরোধিতা করেননি ।
সিপিএম যখন বর্ধমানে সাঁইবাড়ির ভাইদের হত্যা করে তাদের রক্তে মাখা ভাত তাদের মায়ের মুখে গুঁজে দিয়েছিল, তখন নবারুণ ভট্টাচার্য চুপ করেছিলেন । মরিচঝাঁপিতে দ্বীপ ঘিরে উদ্বাস্তুদের ওপর গুলি চালনার ও সমুদ্রে লাশ ফেলে দেবার নিন্দা করেননি । বিজন সেতুর উপরে সতেরোজন সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীর গায়ে পেট্রল ঢেলে জ্যান্তু পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি । সুচপুরের এগারোজন মুসলমান চাষিকে যখন ঘিরে ধরে খুন করা হলো তখন মুখ খোলেননি । বানতলায় মহিলা অফিসারদের জিপ থেকে টেনে নামিয়ে গণধর্ষণ ও খুন এবং একজনের যোনিতে টর্চ গুঁজে দেবার ঘটনা মুখ বুজে মেনে নিয়েছেন।
হাংরি জেনারেশনের গল্প লেখক, অশোকনগর উদ্বাস্তু কলোনির নিবাসী, বাসুদেব দাশগুপ্ত উপরোক্ত ঘটনাগুলোর জন্য সিপিএম ত্যাগ করেছিলেন এবং ঘটনাগুলির বিরোধিতা করে পথসভায় বক্তৃতা করতেন, একথা জেনে যে তাঁকেও মারধর করা হতে পারে ।
এই পোস্টের প্রসঙ্গে মলয় রায়চৌধুরী জানিয়েছেন যে "নবারুণ ওনার পত্রিকায় আমার লেখা ছাপতে চাননি । আমার 'নামগন্ধ' উপন্যাসে একটি চরিত্রের গাড়ি সেই থিয়েটারের সামনে থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল, যেখানে বিজন ভট্টাচার্য অভিনয় করছিলেন । আমার বাবা-মা কেউ স্কুলে পড়েননি, দুজনেই আঙ্গুঠাছাপ।"
উপরের দুটি বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে নবারুণ ভট্টাচার্য এবং মলয় রায়চৌধুরী বাঙালির দুটি বিপরীত সাংস্কৃতিক মেরুর নিবাসী ।এই প্রসঙ্গে যদি অন্যান্য হাংরি আন্দোলনকারীদের সামাজিক ও আর্থিক ব্যাকগ্রাউণ্ডের কথা তোলা হয় তাহলে দেখা যাবে যে সুবিমল বসাকের বাবা ছিলেন একজন স্যাকরা, যিনি দারিদ্রের কারণে নাইট্রিক অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করেন । দেবী রায় ছিলনের হাওড়ার একটি বস্তির একটি ঘরের ভাড়াটে, তাঁর মা প্রতিদিন বাজার থেকে কুড়িয়ে-আনা কুমড়োর বীজ শুকিয়ে বিক্রি করে দেবী রায় ও তাঁর ছেটো ভাইকে প্রতিপালন করেছিলেন । ফালগুনী রায় ছিলেন ধ্বসে যাওয়া এক পোড়োবাড়ির ছেলে যার সদস্যরা সেই বাড়ির মার্বেল পাথর তুলে-তুলে বিক্রি করে সংসার চালাতেন ; স্বাভাবিক যে উপযুক্ত খাওয়া-দাওয়া না পাবার কারণে অতি অল্প বয়সে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল । বাসুদেব দাশগুপ্ত, সুভাষ ঘোষ, শৈলেশ্বর ঘোষ, প্রদীপ চৌধুরী ও সুবো আচার্য ছিলেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তু পরিবারের সন্তান । এনাদের কারোর বাবা-মা শিক্ষার সুযোগ পাননি এবং পশ্চিমবাংলায় এসে বেঁচে থাকার লড়াই লড়তে হয়েছিল ।
শংকর সেন লিখেছেন, "নবারুণবাবু ওনার পত্রিকায় একবার হাংরিদের বিরুদ্ধে প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন ; সুতরাং মলয়বাবুর লেখা ওনার পত্রিকায় প্রকাশিত হবার প্রশ্ন ওঠে না । নবারুণবাবু ছিলেন অভিজাত প্রতিষ্ঠানবিরোধী। বিজন ভট্টাচার্যের ছেলে, অভিজাত পরিবারের সন্তান, সোভিয়েত ও কমিউনিস্টদেশ ভ্রমণের সুযোগ-পাওয়া নবারুণ ভট্টাচার্যের সঙ্গে হাংরি জেনারেশনের লেখকদের তুলনা করা উচিত নয় । কলকাতার যে চাকচিক্যময় সমাজে নবারুণবাবুর ঘোরাফেরা ছিল প্রতিদিনের ব্যাপার, সেখানে হাংরি জেনারেশনরা ছিল সম্পূর্ণ উটকো ।"ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস", "নামগন্ধ", "অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা" উপন্যাসগুলির অভিজ্ঞতার গভীরতা কলকাতাকেন্দ্রিক নবারুণবাবুর ছিল না । তিনি ছিলেন কলকাতার লেখক, কলকাতার অন্ধকার জগতের জন্য গড়ে-নেয়া ভাষার লেখক । মলয় রায়চৌধুরীর মতো ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল না।"
এই প্রসঙ্গে উপযুক্ত মন্তব্য করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুতপা সেনগুপ্ত । তিনি বলেছেন, "আসলে নবারুণ মধ্যপন্হী । হাংরি জেনারেশনের টুলস নিয়ে জনপ্রিয় বয়ান ফেঁদেছেন।"
নবারুণ ভট্টাচার্যের মধ্যপন্হা অবলম্বন সম্পর্কে নয়নতারা দাশ বলেছেন, "নবারুণবাবু স্ট্যালিনের নরসংহার নিয়ে নিশ্চুপ । সিপিএমের খুনি দৌরাত্ম্য নিয়ে নিশ্চুপ । কেবল আনন্দবাজারকে আক্রমণ করে কি প্রতিষ্ঠানবিরোধী হওয়া যায় ? মলয় রায়চৌধুরী কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি । হয়তো উনি সেই জন্যই বড়ো প্রকাশক পাননি । প্রকৃত অর্থে হাংরি জেনারেশনরাই একমাত্র প্রতিষ্ঠানবিরোধী।"
উপরে উল্লিখিত বক্তব্যগুলি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ । কলকাতার ধনীদের কলোনি গল্ফগ্রিন নিবাসী নবারুণ ভট্টাচার্য ছিলেন অভিজাত বাঙালি সমাজের অংশ, তাঁর পিতা ছিলেন প্রখ্যাত নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা, তাঁর মা একজন প্রথিতযশা লেখিকা, তাঁর দাদু মনীশ ঘটক একজন কবি ও গল্পকার । তাঁকে স্বাভাবিকভাবে "প্রতিষ্ঠানবিরোধী" তকমা দিয়েছেন ওই অভিজাত বাঙালি সমাজের সদস্যরা । প্রতিষ্ঠানবিরোধী তকমা পেয়েও রাষ্ট্রের হাত থেকে ১৯৯৩ সালে "হারবার্ট" উপন্যাসের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার নিতে তাঁর বিবেকে বাধেনি, যখন কিনা সেই রাষ্ট্রের তিনি অবিরাম সমালোচনা করেছেন, পুরন্দর ভট ছদ্মনামে তার বিরুদ্ধে অশ্লীল কবিতা লিখেছেন । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ২০০৩ সালে সাহিত্য অকাদেমির একটি পুরস্কার মলয় রায়চৌধুরী প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ।
"ভাষাবন্ধন" নামে নবারুণবাবুর একটি প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা ছিল, প্রতি বইমেলায় তিনি স্টল দিতেন । নাটকের ও ফিল্মের অভিজাত শ্রেনির মানুষদের সঙ্গে উঠতেন-বসতেন, আড্ডা দিতেন । সুমন মুখোপাধ্যায় "হারবার্ট" নিয়ে ফিল্ম করেছিলেন, "কাঙাল মালসাট" নিয়ে নাটক করেছিলেন । ওই সমাজের সদস্যেরা ছিল হাংরি জেনারেশনদের ধরাছোঁয়ার বাইরে । যেমন সৃজিৎ মুখোপাধ্যায় হাংরি জেনারেশনকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য "বাইশে শ্রাবণ" ফিল্মে একটি পাগল চরিত্রকে হাংরি আন্দোলনের কবি হিসাবে উপস্হিত করেছিলেন, পরিচালক গৌতম ঘোষ অভিনীত সেই চরিত্রটি নাকি কলকাতার বইমেলায় আগুন ধরিয়েছিল !
এবারে আসা যাক নবারুণবাবুর স্ট্যালিনপ্রীতি নিয়ে । তিনি কোথাও উল্লেখ করেননি স্ট্যালিনের সোভিয়েত রাষ্ট্রে কবি-লেখকদের কী গতি করা হয়েছিল, অথচ তিনি সোভিয়েতদেশে গিয়েছেন । স্ট্যালিনের কাছ থেকে কবি-লেখক নিধনের গুরুমন্ত্র পেয়ে টিক্কা খান-ইয়াহিয়া খানরা স্বাধীন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিদের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, লাতিন আমেরিকাতেও শাসকরা স্ট্যালিনের গুরুমন্ত্র পেয়ে কবি-লেখকদের হত্যা করার ঐতিহ্য তৈরি করে ফেলেছে । নবারুণবাবু এগুলোর বিরোধিতা করেননি ।
সিপিএম যখন বর্ধমানে সাঁইবাড়ির ভাইদের হত্যা করে তাদের রক্তে মাখা ভাত তাদের মায়ের মুখে গুঁজে দিয়েছিল, তখন নবারুণ ভট্টাচার্য চুপ করেছিলেন । মরিচঝাঁপিতে দ্বীপ ঘিরে উদ্বাস্তুদের ওপর গুলি চালনার ও সমুদ্রে লাশ ফেলে দেবার নিন্দা করেননি । বিজন সেতুর উপরে সতেরোজন সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনীর গায়ে পেট্রল ঢেলে জ্যান্তু পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি । সুচপুরের এগারোজন মুসলমান চাষিকে যখন ঘিরে ধরে খুন করা হলো তখন মুখ খোলেননি । বানতলায় মহিলা অফিসারদের জিপ থেকে টেনে নামিয়ে গণধর্ষণ ও খুন এবং একজনের যোনিতে টর্চ গুঁজে দেবার ঘটনা মুখ বুজে মেনে নিয়েছেন।
হাংরি জেনারেশনের গল্প লেখক, অশোকনগর উদ্বাস্তু কলোনির নিবাসী, বাসুদেব দাশগুপ্ত উপরোক্ত ঘটনাগুলোর জন্য সিপিএম ত্যাগ করেছিলেন এবং ঘটনাগুলির বিরোধিতা করে পথসভায় বক্তৃতা করতেন, একথা জেনে যে তাঁকেও মারধর করা হতে পারে ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন