রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৬

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের আত্মজীবনী ( ২০০২ ) "অর্ধেক জীবন" গ্রন্হে হাংরি আন্দোলন সম্পর্কে যা বলেছেন

দেশে ফেরার পর বেশ কিছু বন্ধুর উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলেও বন্ধুত্বের ব্যাপারেই জীবনের প্রথম চরম আঘাতটাও পাই এই সময় । এর দু-এক দিনের মধ্যেই হাংরি জেনারেশনের সমীর রায়চৌধুরী ও মলয় রায়চৌধুরীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ।  সমীর কলেজ জীবন থেকেই আমার বন্ধু, চাইবাসা-ডালটনগঞ্জে তার বাড়িতে কত দিন ও রাত কাটিয়েছি, বন্ধুকৃত্যে সে অতি উদার, আমার প্রথম কাব্যগ্রন্হের প্রকাশকও সমীর । মলয়কেও চিনি তার ছোটবয়স থেকে । হাংরি জেনারেশন আন্দোলন শুরু হয় আমার অনুপস্হিতিতে ও অজ্ঞাতসারে । সেই সময়কার ইংল্যাণ্ডের অ্যাংরি ইয়াং মেন আর আমেরিকার বিট জেনারেশন, এই দুই আন্দোলনের ধারা মিলিয়ে সম্ভবত হাংরি আন্দোলনের চিন্তা দানা বেঁধেছিল, হয়তো অ্যালেন গিন্সবার্গের প্রেরণাও ছিল কিছুটা এবং মুখ্য ভূমিকা ছিল মলয়ের ।

যেসব বন্ধুদের সঙ্গে আমার প্রতিদিন ওঠাবসা, তারা একটা নতুন করতে যাচ্ছে সম্পূর্ণ আমাকে বাদ দিয়ে ? এর কী কারণ থাকতে পারে, তা আমি কিছুই বুঝতে পারিনি । বন্ধুদের কাছে আমি অসহ্য হয়ে উঠেছি, কিংবা আমার হাতে নেতৃত্ব চলে যাওয়ার আশঙ্কা ? একটা গভীর বেদনাবোধ আমি লুকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম ।

আমার ফেরার কয়েক দিনের মধ্যেই কাকতালীয়ের মতন পুলিশ গ্রেপ্তার করে সমীর ও মলয়কে । তাতে কয়েকজন মনে করল আমিই ওদের ধরিয়ে দিয়েছি । যেন দমদমে পদার্পণ করেই আমি পুলিশ কমিশনারকে টেলিফোনে আদেশ করেছি, ওই কটাকে ধরে গারদে পুরুন তো !

পুলিশি তৎপরতার সূত্রপাতেই হাংরি জেনারেশনের প্রথম সারির নেতারা সবাই পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে জানিয়ে আসে, ভবিষ্যতে ওরা ওই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না । সমীরও ছাড়া পেয়ে যায়, মামলা হয় শুধু মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে, অশ্লীলতার অভিযোগে । সেই সময় মলয় খানিকটা একা হয়ে পড়ে । মামলা ওঠার আগে মলয় আমার বাড়িতে এসে অনুরোধ জানায় আমাকে তার পক্ষ নিয়ে সাক্ষ্য দিতে হবে । আমি তৎক্ষণাত রাজি হয়ে জানিয়েছিলাম পৃথিবীর যে কোনো দেশেই সাহিত্যের ব্যাপারে পুলিশের হস্তক্ষেপের আমি বিরোধিতা করব ।

( যাঁরা  পুলিশর ভয়ে হাংরি আন্দোলন ত্যাগ করার ও মলয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবার মুচলেকা দিয়েছিলেন তাঁরা হলেন, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শৈলেশ্বর ঘোষ এবং সুভাষ ঘোষ )
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন