পার্ল রোড, কলকাতা,
৩১ অক্টোবর ১৯৬৪
প্রিয় শ্রীগিন্সবার্গ
আপনার ১৩ তারিখের উদ্দেশ্যহীন অবমাননাকর চিঠি পেয়ে আমি বিস্মিত । আপনি যে কংগ্রেস ফর কালচারাল ফ্রিডমকে কমিউনিস্টদের দ্বারা চিহ্ণিত একটি জোচ্চোর বুলশিট উদারনৈতিক আঁতেলদে কমিউনিস্টবিরোধী সিনডিকেট বলে মনে করেন, তাতে আমি অবাক হইনি ; কেননা আমি কখনও কংগ্রেস ফর কালচারাল ফ্রিডামকে আপনার লেবেল 'বুর্জোয়া' কিংবা 'শ্রদ্ধেয়' থেকে মুক্ত করার কথা ভাবিনি ।
যদি কোনো পরিচিত ভারতীয় সাহিত্যিক বা বুদ্ধিজীবি তাদের সাহিত্যিক বা বৌদ্ধিক কাজের জন্য পুলিশের অবদমনের শিকার হতো , আমি নিশ্চিত যে ভারতীয় কংগ্রেস ফর কালচারাল ফ্রিডাম আপনার অপমানজনক ওসকানি ছাড়াই হস্তক্ষেপ করতো । আমি আপনাকে জানিয়ে আনন্দিত যে তেমন কোনো কিছুই সাম্প্রতিককালে এদেশে ঘটেনি । মলয় রায়চৌধুরী ও তাঁর হাংরি জেনারেশনের তরুণ বন্ধুরা, আমার জ্ঞানমতে তেমন কোনো রচনা লিখে উঠতে পারেনি, যদিও তারা আত্মপ্রচার করে লিফলেট ছাপিয়ে বিলি করেছে এবং গণ্যমান্য লোকেদের চিঠি নোংরা ও অশ্লীল ভাষায় প্রকাশ করেছে ( আমি আশা করি আপনি স্বীকার করবেন যে 'ফাক' শব্দটি অশ্লীল এবং 'বাস্টার্ড' শব্দটি নোংরা, অন্তত এই বাক্যটিতে, "গাঙশালিক স্কুলের জারজদের ধর্ষণ করো", তারা এর চেয়েও খারাপ ভাষায় কবিদের নাম উল্লেখ করে লিখতে ইতস্তত করেনি )। সম্প্রতি তারা একজন মহিলাকে ভাড়া করে তার উন্মুক্ত বুক দেখাবার প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল এবং সেই আশ্চর্যজনক আভাঁগার্দ প্রদর্শনী দেখার জন্য অনেকের সঙ্গে আমাকেও আহ্বান করেছিল । আপনি পৃথিবীর ওই পারে বসে কলকাতায় এই ধরণের বয়ঃসন্ধিকালীন ইয়ার্কিকে প্রচার করায় আপনার সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা বলে চালাতে পারেন । আশা করি আমার যা দায়িত্ব তা পালন করার জন্য আপনি আমাকে আপনার মতের সঙ্গে পার্থক্য সমর্থন করবেন ।
পুলিশের পক্ষে নিশ্চয়ই বোকামি হয়েছে এই যুবকদের গড়া ফাঁদে পড়ে তাদের কয়েকজনকে কয়েক দিনের জন্য হেফাজতে নেয়া ( তাদের সবাইকে এখন ছেড়ে দেয়া হয়েছে ) আর তার দ্বারা তাদের প্রচারে সুবিধা করে দেয়া এবং জনসাধারণের সহানুভূতি সংগ্রহ করা -- তারা তাদের ইয়ার্কির মাধ্যমে নিজেদের প্রচারই চাইছিল ।
আপনার মতের সঙ্গে আমার এ-ব্যাপারে মিল নেই যে ইনডিয়ান কমিটি ফর কালচারাল ফ্রিডামের প্রধান কাজ হলো মার্কিন বিটনিক কবিদের কাঁচা অনুকরণকারীদের সাহায্য করা । ইউরোপীয় সাহিত্য সম্পর্কে আপনার জ্ঞানকে আমি শ্রদ্ধা করি কিন্তু আমার ভাষার সাহিত্যকদের মূল্যায়ন করার ক্ষমতাকে আপনার নির্দেশে খর্ব করতে পারি না -- যে ভাষা সম্পর্কে আপনি নিজের অজ্ঞতা বেছে নিয়েছেন ।
আপনার সঙ্গে গূঢ় পার্থক্য সত্ত্বেও এবং আপনার কয়েকটি অসাধারণ কবিতাকে ভালোলাগা সত্ত্বেও আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই ।
ভবদীয়
আবু সয়ীদ আইয়ুব
( অ্যালেন গিন্সবার্গ জানতেন না যে কলকাতা পুলিশে যাঁরা হাংরিদের বিরুদ্ধে নালিশ করেছেন তাঁদের মধ্যে শ্রী আইয়ুব অন্যতম । আইয়ুব তাঁর চিঠিতে গিন্সবার্গকে জানাচ্ছেন যে পুলিশ সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে -- এটি ভুল তথ্য । মে ১৯৬৫ সালে পুলিশ সবাইকে রেহাই দিয়ে মলয় রায়চৌধুরীর "প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার" কবিতাটির জন্য অশ্লীলতার মামলা দায়ের করেছিল । নিম্ন আদালতে মলয় রায়চৌধুরীর একমাসের কারা দণ্ডাদেশ হয়েছিল, ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সালে । কলকাতা হাইকোর্টে মলয় মামলা জিতে যান জুলাই ১৯৬৭ সালে । অর্থাৎ মামলাটির জন্য মলয় রায়চৌধুরীকে ৩৫ মাস আদালতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছিল । )
মলয় রায়চৌধুরীর মামলায় সবচেয়ে ঘৃণ্য ও ক্ষমার অযোগ্য আচরণ করেছিলেন শৈলেশ্বর ঘোষ ও সুভাষ ঘোষ, হাংরি জেনারেশন আন্দোলনের বিরুদ্ধে মুচলেকা দিয়ে এবং আদালতে মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়ে । মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে এই মামলায় পুলিশের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু এবং সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ।
৩১ অক্টোবর ১৯৬৪
প্রিয় শ্রীগিন্সবার্গ
আপনার ১৩ তারিখের উদ্দেশ্যহীন অবমাননাকর চিঠি পেয়ে আমি বিস্মিত । আপনি যে কংগ্রেস ফর কালচারাল ফ্রিডমকে কমিউনিস্টদের দ্বারা চিহ্ণিত একটি জোচ্চোর বুলশিট উদারনৈতিক আঁতেলদে কমিউনিস্টবিরোধী সিনডিকেট বলে মনে করেন, তাতে আমি অবাক হইনি ; কেননা আমি কখনও কংগ্রেস ফর কালচারাল ফ্রিডামকে আপনার লেবেল 'বুর্জোয়া' কিংবা 'শ্রদ্ধেয়' থেকে মুক্ত করার কথা ভাবিনি ।
যদি কোনো পরিচিত ভারতীয় সাহিত্যিক বা বুদ্ধিজীবি তাদের সাহিত্যিক বা বৌদ্ধিক কাজের জন্য পুলিশের অবদমনের শিকার হতো , আমি নিশ্চিত যে ভারতীয় কংগ্রেস ফর কালচারাল ফ্রিডাম আপনার অপমানজনক ওসকানি ছাড়াই হস্তক্ষেপ করতো । আমি আপনাকে জানিয়ে আনন্দিত যে তেমন কোনো কিছুই সাম্প্রতিককালে এদেশে ঘটেনি । মলয় রায়চৌধুরী ও তাঁর হাংরি জেনারেশনের তরুণ বন্ধুরা, আমার জ্ঞানমতে তেমন কোনো রচনা লিখে উঠতে পারেনি, যদিও তারা আত্মপ্রচার করে লিফলেট ছাপিয়ে বিলি করেছে এবং গণ্যমান্য লোকেদের চিঠি নোংরা ও অশ্লীল ভাষায় প্রকাশ করেছে ( আমি আশা করি আপনি স্বীকার করবেন যে 'ফাক' শব্দটি অশ্লীল এবং 'বাস্টার্ড' শব্দটি নোংরা, অন্তত এই বাক্যটিতে, "গাঙশালিক স্কুলের জারজদের ধর্ষণ করো", তারা এর চেয়েও খারাপ ভাষায় কবিদের নাম উল্লেখ করে লিখতে ইতস্তত করেনি )। সম্প্রতি তারা একজন মহিলাকে ভাড়া করে তার উন্মুক্ত বুক দেখাবার প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিল এবং সেই আশ্চর্যজনক আভাঁগার্দ প্রদর্শনী দেখার জন্য অনেকের সঙ্গে আমাকেও আহ্বান করেছিল । আপনি পৃথিবীর ওই পারে বসে কলকাতায় এই ধরণের বয়ঃসন্ধিকালীন ইয়ার্কিকে প্রচার করায় আপনার সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা বলে চালাতে পারেন । আশা করি আমার যা দায়িত্ব তা পালন করার জন্য আপনি আমাকে আপনার মতের সঙ্গে পার্থক্য সমর্থন করবেন ।
পুলিশের পক্ষে নিশ্চয়ই বোকামি হয়েছে এই যুবকদের গড়া ফাঁদে পড়ে তাদের কয়েকজনকে কয়েক দিনের জন্য হেফাজতে নেয়া ( তাদের সবাইকে এখন ছেড়ে দেয়া হয়েছে ) আর তার দ্বারা তাদের প্রচারে সুবিধা করে দেয়া এবং জনসাধারণের সহানুভূতি সংগ্রহ করা -- তারা তাদের ইয়ার্কির মাধ্যমে নিজেদের প্রচারই চাইছিল ।
আপনার মতের সঙ্গে আমার এ-ব্যাপারে মিল নেই যে ইনডিয়ান কমিটি ফর কালচারাল ফ্রিডামের প্রধান কাজ হলো মার্কিন বিটনিক কবিদের কাঁচা অনুকরণকারীদের সাহায্য করা । ইউরোপীয় সাহিত্য সম্পর্কে আপনার জ্ঞানকে আমি শ্রদ্ধা করি কিন্তু আমার ভাষার সাহিত্যকদের মূল্যায়ন করার ক্ষমতাকে আপনার নির্দেশে খর্ব করতে পারি না -- যে ভাষা সম্পর্কে আপনি নিজের অজ্ঞতা বেছে নিয়েছেন ।
আপনার সঙ্গে গূঢ় পার্থক্য সত্ত্বেও এবং আপনার কয়েকটি অসাধারণ কবিতাকে ভালোলাগা সত্ত্বেও আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই ।
ভবদীয়
আবু সয়ীদ আইয়ুব
( অ্যালেন গিন্সবার্গ জানতেন না যে কলকাতা পুলিশে যাঁরা হাংরিদের বিরুদ্ধে নালিশ করেছেন তাঁদের মধ্যে শ্রী আইয়ুব অন্যতম । আইয়ুব তাঁর চিঠিতে গিন্সবার্গকে জানাচ্ছেন যে পুলিশ সবাইকে ছেড়ে দিয়েছে -- এটি ভুল তথ্য । মে ১৯৬৫ সালে পুলিশ সবাইকে রেহাই দিয়ে মলয় রায়চৌধুরীর "প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার" কবিতাটির জন্য অশ্লীলতার মামলা দায়ের করেছিল । নিম্ন আদালতে মলয় রায়চৌধুরীর একমাসের কারা দণ্ডাদেশ হয়েছিল, ফেব্রুয়ারি ১৯৬৬ সালে । কলকাতা হাইকোর্টে মলয় মামলা জিতে যান জুলাই ১৯৬৭ সালে । অর্থাৎ মামলাটির জন্য মলয় রায়চৌধুরীকে ৩৫ মাস আদালতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছিল । )
মলয় রায়চৌধুরীর মামলায় সবচেয়ে ঘৃণ্য ও ক্ষমার অযোগ্য আচরণ করেছিলেন শৈলেশ্বর ঘোষ ও সুভাষ ঘোষ, হাংরি জেনারেশন আন্দোলনের বিরুদ্ধে মুচলেকা দিয়ে এবং আদালতে মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাজসাক্ষী হয়ে । মলয় রায়চৌধুরীর বিরুদ্ধে এই মামলায় পুলিশের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, উৎপলকুমার বসু এবং সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন